ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

ইট ভাটা : পাহাড়ে পরিবেশ বিপর্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক ::

ইট ভাটার কালো ধোঁয়া প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটাচ্ছে।প্রকাশ্যে ক্রমাগত বনের কাঠ পুড়লেও নিয়ন্ত্রন করছে না প্রশাসন। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নীতিমালা কার্যকরের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের হলেও আজ অব্দি অবৈধ ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলাসহ কোথাও প্রশাসন নেই।রাস্তার ধারে আইনের তোয়াক্কা না করে দিন রাত অবৈধ ইট ভাটা চললেও ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা। খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন , ইট ভাটায় টিন বা ড্রামের চিমনি ব্যবহারের সম্পূর্ণ নিষেধ আছে ।এটি আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। মূলত ইট ভাটার মালিকেরা খরচ বাঁচাতে সস্তায় এসব নিম্ন মানের ড্রামের চিমনি ব্যবহার করে।এতে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হলেও প্রশাসন নিশ্চুপ আছে। টিনের চিমনি ব্যবহার কারণে আবাসিক ও সৃজন করা বনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন প্রশাসনের চোখের সামনে ইট ভাটা চললেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরোক্ষভাবে প্রশাসন ইট ভাটা মালিকদের সহযোগিতা করছে।

শুধু টিনের চিমনি নয় বনের কাঠ,কৃষির জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করে আইনের নীতিমালা লঙ্ঘন করছে ইটভাটা মালিকেরা।অবৈধ ইটভাটায় টিনের ড্রামের চিমনি ব্যবহার করার কারণে পরিবেশের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় নেমে আসছে।টিনের ড্রামের চুল্লি ব্যবহারের কারণে আশেপাশের এলাকায় পরিবেশগত বিপর্যয় হয়। এসব চুল্লি থেকে অতি মাত্রায় কার্বন নিঃসরিত হয়।এছাড়া ড্রামের চুল্লি বা চিমনি থেকে তাপ নিঃসরণের ফলে আশে পাশের গাছ পালা হলুদ বর্ণের হয়ে যায়।এছাড়া ফলদ বৃক্ষে ফল আসে না । ইট ভাটার আশে পাশের আবাসিক এলাকায় জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়। ইট ভাটায় ড্রামের চুল্লি ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষেধ থাকলেও মানছে না কেউ।আবাসিক এলাকা থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে ইট ভাটা স্থাপনের কথা থাকলেও কেউ তা মানছেনা । সরেজমিনে দেখা যায়, খাগড়াছড়ির জেলা সদর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে মাটিরাঙার দশ নাম্বার,বটতলা এবং ধলিয়া খালে তীরবর্তী এলাকাসমূহে তিন থেকে চারটি ভাটা আইনের সবগুলো ধারা লঙ্ঘন করছে।ইটভাটার জন্য পাশের টিলা কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে ভাটা মালিকেরা টাকা দিয়ে বনের কাঠ ও কৃষি জমির উপরিভাগ(টপ সয়েল) থেকে মাটি তুলে নিয়ে যাচ্ছে।ইট ভাটার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলেন, ‘দূর থেকে মাটি আনতে খরচ বেশী পড়ে। আশপাশের ধানি জমি থেকে মাটি আনছি। কাঠ আনার জন্য আলাদা লোক আছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা কাঠ এনে দেয়। এক রাউন্ডে প্রায় ৫ লক্ষ ইট পোড়ানো হয় এতে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার মণ কাঠ লাগে।

ইট ভাটায় কয়েকজন শ্রমিক জানান,‘দিন রাত এখানে কাজ চলে। বিভিন্ন রকমের মূল্যবান কাঠও পোড়ানো হয়। তবে ই্‌টভাটা কয়লা ব্যবহারের কথা থাকলেও তা ভুলতে বসেছে ইট ভাটার মালিকেরা।’বনের কাঠ ব্যবহারে বন বিভাগে বিধি নিষেধ থাকলেও কাঠ কাটা নিয়ন্ত্রণের কোন উদ্যোগ নেই। তাছাড়া পার্বত্য জেলা সমূহে ইট ভাটা স্থাপনে স্থান নির্ধারণ করার আগে পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানছে না ।

মাটিরাঙার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিএম মশিউর রহমান বলেন,‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হবে। উপজেলার কোথায় ভাটা মালিকেরা আইন লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।

পাঠকের মতামত: